লালমনিরহাট: ঈদকে কেন্দ্র করে চলছে মাদক মজুত। ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে নেওয়া।
হেলাল হোসেন কবির: লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলা জুরে মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের শান্ত আদিতমারী এখন মাদকে সয়লাব হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও সহজলভ্যতায় উপজেলাটির বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে মাদকের ব্যাপকতা।মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীরাও এখন বেশ বেপরোয়া। পুলিশের নাকের ডগায় বসছে জুয়ার আসরও। আর এতে করে বেড়েছে চুরি, ছিনতাই, নারী নির্যাতনসহ সামাজিক নানা অপরাধ।প্রশাসন যেন ঘুমের মাঝে মাছি তারাছে!
জানা যায়, প্রশাসন আদিতমারীকে শান্ত ভেবেই খুব বেখেয়ালীপনা ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অপরদিকে বিভিন্ন ইউনিয়নের মেম্বার ও চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় চলছে মাদক ব্যবসা। কিছুটা রাজনীতির দলাদলী থাকার কারনেও সুযোগ নিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। বেড়েছে মাদক সেবনকারী। যার ফলে ঘটছে ছিনতাই ও চুরি।
স্থানীয়রা ধারনা করছেন, মাদক-জুয়ার প্রবণতা বাড়ায় ছিঁচকে চুরি ঘটতে ঘটতে বিভিন্ন দুধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। মাদক ও জুয়া দমনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এদিকে সীমান্ত এলাকাগুলোতে হরহামেশায় চোখে পড়ছে মাদক সেবনের দৃশ্য। উপজেলার বেশ কয়েকটি চিহ্নিত রুট দিয়ে অবাধে মাদকের বড় বড় চালান পাচারের ঘটনাও মানুষের মুখে মুখে।
অবশ্য নামমাত্র অভিযানে পুলিশ কাউকে কাউকে গ্রেফতার করছে। যাদের অধিকাংশই চুনোপুঁটি। অধরা থাকছে মাদক ডিলাররা। তাদের সাথে সখ্যতা দেখা যায় কতিপয় দায়িত্বশীলদের। আর অল্প পরিমান মাদকদ্রব্য নিয়ে চুনোপুঁটিদের গ্রেফতার দেখানোয় আইনের ফাঁক দিয়ে অল্প সময়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে।
আদিতমারী থানার তথ্য অনুযায়ী গেল জুন মাসে, মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮টি মামলায় ১৩জন গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে মাত্র ৮পিচ ইয়াবা, ২বোতল ফেন্সিডিল, ১বোতল মদ আর আধা কেজি গাঁজা। যা আগের বছরের উদ্ধার পর্যালোচনায় রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ বলে দাবি মাদক বিরোধীদের।
দূর্গাপুরের ডিক্রির চর যেন মাদকের আড়ৎ হয়ে উঠেছে। উপজেলার ওই স্থানেই ২০১৭ সালে মাদক ব্যবসায়ীর ছুরিকাঘাতে এসআই জাহিদসহ তিন পুলিশ সদস্য গুরত্বর আহত হন। সেই দূর্গাপুর এখনো মাদকের রাজধানী। সেখানে অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদকদ্রব্য বিক্রি হয় বলে দাবি স্থানীয়দের।
এছাড়াও ভেলাবাড়ী, হাজীগঞ্জ, দুলালী, মরিচবাড়ি, মান্নানের চৌপথি, কুমড়িরহাট, কমলাবাড়ি, দুরারকুটি, মাদক ব্যবসার জন্য নিরাপদ স্থান মনে করছেন কারবারিরা।
জনশ্রুতি আছে, পুলিশের ছত্র ছাঁয়ায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলেই পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির দাবি, কিছু দিন আগে লালমনরিহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ও কুলাঘাট মাদকের নিরাপদ রুট ছিল। এখন আদিতমারী এলাকায় সুবিধা পাওয়ায় সেখানে ভীর বাড়ছে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে সামাজিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি ধ্বংসের মুখে পড়বে যুব সমাজ।
রামদেব এলাকায় দিন রাত জুয়া খেলা হচ্ছে অথচ নেই পুলিশি অভিযান। জুয়ার সাথে মাদকও সয়লাব। পুলিশকে জানিয়ে কোন লাভ হয় না বলে দাবি করেন বিভিন্ন এলাকার মানুষজন। বরাবরের মতো সুশীল সমাজের লোকজন দাবি করে বলেন, জাতীয় ভাবে মাদকের যখন অভিযান চলে ঠিক তখনই পুলিশকে বেশ ধরপাকর করতে দেখা যায়। তা ছাড়া পুলিশ আর মাদক ব্যবসায়ীরা চোর পুলিশ খেলা করে।
হঠাৎ মাদকের এমন সহজলভ্যতা কারণ জানতে চাইলে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলনে, মাদকের অভিযান চলছে। অতীতের তুলনায় বর্তমান অবস্থা ভালো। যে সামান্ন আছে তা দুর করা হবে।
পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, মাদকের বিষয়ে পুলিশ আগেও ততপর ছিলো এখনো আছে। মাদকের বিষয়ে কোন ধরনরে ছাড় নেই।